অনলাইন ডেস্ক : রাজশাহী নগরীতে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক যেন নগরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরবাসী এ দুটি বাহনে যাতায়াতের সুবিধা পেলেও প্রতিদিনের যানজট যন্ত্রণা দায়ক হয়ে পড়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে নাগরিক দুর্ভোগ।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চায় নগরবাসী। একদিকে যেমন যানজট অন্যদিকে রয়েছে ফুটপাত দখল। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন অল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে দেখা মিলে রাসিকের উচ্ছেদ অভিযান। অভিযানের শেষে আবারও বসানো হয় দোকান-পাট। ফুটপাত দখলের কারণে পথচারীরা ঠিকমত হাঁটতেও পারছেন না। করোনাকালেও প্রতিদিন নগরীতে যানজটের এই অবস্থা দেখলে মনে হবে দেখার কেউ নেই।
নগরীর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে স্বল্প ভাড়ায় দ্রুত যাতায়াতের সুবিধার কারণে নগরবাসী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক ব্যবহার করেন। কিন্তু এসব বাহনের চালকরা সড়কে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনা। ফলে নগরীতে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় সীমাহীন যানজট। আর প্রতিদিনের যানজটের দুর্ভোগ এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী।
রাস্তা পার হওয়ার জন্য সাহেববাবাজার জিরোপয়েন্টে তার কন্যাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গৃহবধূ তানহা। তিনি বলেন, রাস্তা পার হবো বলে প্রায় পাঁচ মিনিট থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বেপরোয়া অটোরিকশার কারণে পার হতে পারছি না। এখান থেকে ওভারব্রিজও অনেক দূরে। আর ফুটপাত দখল করে বসে আছে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। সেদিক দিয়েও যাওয়া কঠিন।
নগরীর উপকণ্ঠ কাঁটাখালী থেকে কাশিয়াডাঙা মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা। এই সড়কে দেখা মিলবে তিন চাকার অটো’র রাস্তা দখল করে যাত্রী ওঠা-নামার দৃশ্য। এতে বাস-ট্রাকসহ অন্য যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এসব গাড়ির চালকরা জানান, ছোট গাড়ির কারণে অসুবিধায় পড়তে হয়। যাত্রী ওঠা-নামার সময় তারা রাস্তা দখল করে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এবং তিন চাকার অধিকাংশ অটো গুলি রাস্তার মাঝ স্থান দিয়ে চলে। না বোঝে সিগন্যাল, না বোঝে ডান-বাম। আর এ কারনে প্রায় ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। তখন দায় আমাদের ওপরে এসে পড়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কাশিয়াডাঙা, হড়গ্রামবাজার, কোর্ট, কোর্ট স্টেশন, সিঅ্যান্ডবি, লক্ষীপুর মোড়, সিটিবাইপাস, বর্ণালীর মোড়, রেলগেট, স্টেশন, শালবাগান, নওদাপাড়া, ভদ্রা, তালাইমারি, কাজলা, বিনোদপুর, কাটাখালি বাজার, সাহেববাজার এলাকায় তিন চাকার যানে ভিড়। অনেকে অভিযোগ করেন, তারা কোন কিছুর নিয়ম না মেনেই যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে লোক ওঠানামা করায়। এতে অনেক সময় পিছন থেকে দ্রুতগতির গাড়ি আসলে দুর্ঘটনার শিকারও হয়। এবিষয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক নবাব ইসলাম জানান, দিনশেষে মালিককে জমার টাকা দিতে হয়। এখন সারাদিন অটো চালিয়েও এই টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। করোনাকালে যাত্রী কমে গেছে । তাই রাস্তায় লোক ডেকে ডেকে তুলতে হয়।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহীতে এক সময় ঘোড়ার গাড়ি চলেছে। তখন নির্ধারিত এলাকা থেকে একটার পর একটা ঘোড়ার গাড়ি যাত্রী নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তখন কোনও যানজট তৈরি হয়নি। আর এখন অটোরিকশার কোন হিসাব নাই। যেখান-সেখান থেকে দুই-তিনটা যাত্রী নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। মনে হচ্ছে, যাত্রীর চেয়ে অটোরিকশার সংখ্যাই বেশি। এসব অটোরিকশা চালকদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। গাড়ি চালানোর তেমন দক্ষতা বা অভিজ্ঞতাও নেই। মাঝেমধ্যে প্রায় অটোরিকশা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে তারা আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলো বিষয় সংশ্লিষ্টদের দেখতে হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ঈ-সাইদ জানান, সিটি করপোরেশন ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার ৭৫০ টি অটোরিকশাকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এখনও দুই হাজার ৫শটি নিবন্ধন বাকি আছে যা পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে।
আর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মোফাখখারুল ইসলাম জানান,এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে এক সাথে লাল ও সবুজ দুই রঙের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। এ বিষয়টি আমরা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। তারা এখনও সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। তারা সিদ্ধান্ত জানালে নগরীতে আবারও দুই রঙের অটোরিকশা চলাচল শুরু করবে।
মতিহার বার্তা ডট কম: ১০ অক্টোবর ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.